প্রচুর গাছপালার কারণে মিজোরামের প্রসিদ্ধি আছে ‘বোটানিস্টস প্যারাডাইস’ নামে। তবে পানির অভাবও আছে সারা মিজোরাম রাজ্যে। তাই বর্ষাকালে এখানকার লোকজন পানি ধরে রাখার চেষ্টা করে। প্রতিটি বাড়িতে নল নেমেছে টিনের চাল দিয়ে রিজার্ভারে। যখন বৃষ্টি হয় তখন পানি সঞ্চয় করে রাখে এরা। কোন কোন বাড়িতে বৃষ্টির এ পানিতেই চলে সারা বছর। এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁতেও বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়। সে জন্য যারা মিজোরামে বেড়াতে যান তারা তেমন একটা পানির অভাব বোধ করেন না।
নানারকম বনজ গাছে সমৃদ্ধ মিজোরাম। রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে বনজ গাছপালা। নানারকম আয়ুর্বেদিক গাছপালা রয়েছে এখানে পাহাড়ের গায়ে গায়ে। আছে দুষ্প্রাপ্য সব অর্কিড ও বনজ ফুলের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি দেখা যায় বনাঞ্চল আর বাগানে। কত না প্রজাতির ফুল আছে এখানে এরও হিসেব নেই। আর রঙ-বেরঙের পোশাকপরা উপজাতির দেখা মেলে মিজোরামের গ্রামে-গঞ্জে।
মিজোরাম নামটি নিয়েও আছে মজার মজার কথা। ‘মি’ হচ্ছে মানুষ, ‘জো’ মানে পাহাড় বা উচ্চভূমি আর ‘রাম’ অর্থ দেশ। ‘মি-জো-রাম’Ñ লুসাই ভাষার এর অর্থ পাহাড়ি মানুষের দেশ। এ রাজ্যে বাস করে মিজো, লুসাই, পাওয়ি, লাখের ও চাকমা আদিবাসীরা। এরা সবাই আজ ‘মিজো’ নামে গর্ববোধ করে। এখানকার লুসাইদের নিয়ে নানা কিংবদন্তিও আছে। এরা যেমন যুদ্ধপটু তেমনই কষ্ট সহিষ্ণু। অতীতে ব্রিটিশ রাজও পর্যুদস্ত হয়েছে বারবার এদেরই হাতে। এক সময়ে মিজোরামের প্রতিটি গ্রামে একটি করে যুদ্ধ শিবির অর্থাৎ জোলবুক ছিল। বাড়ির যুবকরা জোলবুক থেকে যুদ্ধ বিদ্যায় শিক্ষা নিত। প্রতিটি জোলবুকের প্রবেশপথে বাঁশের দণ্ডে নরমুণ্ড ঝোলানো থাকত। আর নরমুণ্ডের সংখ্যাধিক্যে জোলবুকের শ্রেষ্ঠত্ব যাচাই হতো। এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়ি বাঁশের তৈরিÑ মেঝে, দেয়াল, চাল এমনকি আসবাবপত্রও বাঁশের।
মিজোরা মনে করে, এরা মঙ্গোলিয়ানদের উত্তর পুরুষ। এদের পূর্বপুরুষরা চীন থেকে বার্মায় এসে বসতি গড়েছিল। পরে বার্মা থেক এরা এ মিজোরামে আসে।
সরওয়ার জামান রতন
0 comments:
Post a Comment