যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটেÑ তখন কি কেউ তাকে মনে রাখবে? কেউ কি তার কথা বলে স্মৃতি রোমন্থন করবে? যদি করে তবে তাকে বলতে হবে বিজয়ী। সময়ের পরিক্রমায় ভুলে যাওয়া সাধারণ কোন মানুষের মতো নয় সে। তার অংকিত পদচিহ্ন সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সে বিন্নি ধানের খইয়ের মতো। মৌ মৌ করে সৌরভ ছড়ায়। এক সুহাসিনী তন্বী। যে ঋতুবৈচিত্র্যে সাত সাগর পাড়ি দিয়ে চলে যায়, আবার ফিরে আসে মাটির টানে, সংস্কৃতির পানে। ছোট্ট করে বললে তার নাম মৌ। কেউ যদি বলে তোমার আসল নাম কী? চটপট হাসিমাখা উত্তরে বলেন, নওশীন নাহরীন। মিডিয়ায় সবাই তাকে নওশীন নামেই ডাকে। রেডিও জকি থেকে উপস্থাপনা, তারপর মডেল ও অভিনেত্রী। এরপর মিডিয়ার চাকুরে, শেষে এসে প্রযোজক। পরিচয়ের শেষ নেই। খুব সোজাসাপটা, সাদাসিধে, আনন্দপ্রিয় মেয়ে নওশীন। তবে সব পরিচয়ের চেয়ে তিনি নিজেকে তার একমাত্র ছেলে ইহানের মা হিসেবেই পরিচয় দিতে চান সবচেয়ে বেশি। মিডিয়ার শুরুটা রেডিও টুডে, রেডিও ফূর্তি থেকে হলেও অভিনয়ের শুরু রাজীব আহমেদের ‘নিয়ত নিয়তি নিতান্তই’ নাটকের মাধ্যমে। এরপর জনপ্রিয়তার ছোঁয়া আসে আরটিভির ‘জেগে আছো কি?’-এর মাধ্যমে। তারপর যেন এগিয়ে চলা। চলছিল ভালোই। মাঝপথে হঠাৎ অভিনয়ের লাগাম টেনে ধরলেন নওশীন। নিয়ত কি নিয়তির হাতে ছেড়ে দেয়, নাকি নিতান্তই মনের ইচ্ছা। নাটকপাড়া ও নাটকে তার পদচিহ্ন এতটাই ভালোভাবে আঁকা রয়েছে যে, অল্প দিনের বিরতির পর তিনি আগের মতোই কাজ করছেন। তবে এখন তা করছেন বেছে বেছে। এ সম্পর্কে নওশীন বলেন, ‘এখন অভিনয়েই বেশি সময় দিতে চাই। যেমন এ মাসের পুরো সময় এক ঘন্টার নাটকের শুটিং করবো। এর মধ্যে মাসুদ সেজান, শাহরিয়ার নাজিম জয়, শামিমা শাম্মী, অঞ্জন আইচের নাটক রয়েছে। আর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটি ধারাবাহিকেও কাজ করব’। কামাল খানের পরিচালনায় ‘নিশিগন্ধা’ মেগা সিরিয়ালে তিনি একজন মিষ্টি মেয়ের চরিত্রে রূপদান করেছেন। শুধুই অভিনয়। নিয়ত পরিবর্তনশীল ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে নওশীন নিজে প্রযোজক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। নাটক নির্মাণে টাকা ঢেলেই ক্ষান্ত নন তিনি। নাটকের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জায়গায় অবদান রেখে একজন ভালো প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রযোজনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রযোজনা শুরু করেছি। নিয়মিতই প্রযোজনা করব আশা রাখছি। তবে শুধু ভালো কিছু গল্প নিয়েই কাজ করতে চাই।’ গড়পড়তা কাজ নিয়ে থাকার ইচ্ছা আমার নেই। টিভি নাটকের পরিচিত মুখ হিসেবে নওশীন বেশ দর্শকপ্রিয়। তার অভিনীত নাটক যেমন আগেও দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এখনও পাচ্ছে। এর মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র টু বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টু যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করছেন। তার পরও এদেশের মিডিয়ায় নওশীন হারিয়ে যাওয়া কোন সুর নন। তার অবর্তমানে ধুলো জমে তানপুরার তারে, কিন্তু উপস্থিতি তানপুরাকে আরও নতুন করে তোলে। নিজের এত যাওয়া-আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় আমার পরিবারের লোক আছে। এ ছাড়া শুটিংয়ের জন্যই বেশি যাই। এই যেমন কয়েক দিন আগে তৌকীর আহমেদের একটা ধারাবাহিকের কাজ করলাম সেখানে। তা ছাড়া আÍীয়স্বজনদের সঙ্গেও তো দেখা করতে হয়।’
একসময় মিডিয়া ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন নওশীন। কিন্তু যে প্রেম মনে রয়েছে, তাকে কি অত সহজে ছাড়া যায়। তাকে নিয়ে যত গুজবই ঘটুক না কেন, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে তিনি কাজ করে গেছেন। চলচ্চিত্রেও তার চিহ্ন রেখেছেন। আগেই শুরু করা শফিকুল ইসলাম ভৈরবীর ‘সুয়াচান পাখি’র বর্তমান অবস্থান নিয়ে নওশীন বলেন, ‘এটা পরিচালকের ওপর নির্ভর করছে। পরিচালক যখন আবার ডাকবেন তখন শুটিংয়ে সময় দেব।’ তার জীবনে প্রচুর গল্প, যার প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে স্বপ্ন, কঠোর বাস্তবতা, আনন্দ-হাসি-বেদনা, টানাপোড়েনের মিশেল। তার জীবনটাই মেগা ধারাবাহিক। মূল চরিত্রের নওশীন অনন্য লাবণ্যের স্বপ্নচারিণী। সবকিছুর পর তীব্র কল্পনাবিলাস ও আবেগের তাড়না নিয়ে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। সঙ্গে মিডিয়ার ক্যারিয়ারে পালক জোড়া লাগাচ্ছেন। সেটা সাফল্যের না ব্যর্থতার, তা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই তার। নিজের বিশ্বাস, একাগ্রতা ও যোগ্যতা রয়েছে তো। সবকিছু হারালেও জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন তার সন্তান ইহান তো পাশেই রয়েছে। আর কী পাওয়ার আছে? এখন যা পাবেন, তার সবই বোনাস!
0 comments:
Post a Comment