বাংলা সাহিত্যের দিকপাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়




বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১২৪৫ বঙ্গাব্দের ১৩ আষাঢ়, ইংরেজি ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন মঙ্গলবার রাত ৯টায় চব্বিশ পরগণা জেলার কাঁটাল পাড়ায় জš§গ্রহণ করেন। পিতার নাম যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমের অগ্রজ দুজন হলেন শ্যামাচরণ ও সঞ্জীব চন্দ্র। শৈশবে বঙ্কিমচন্দ্র গ্রামের পাঠশালায় কোনদিন যাননি। বাড়িতে পাঠশালার গুরু রামপ্রাণ সরকারের ওপর তার শিক্ষার দায়িত্ব পড়ে। কিন্তু এ গুরুর দ্বারা বঙ্কিমচন্দ্রের মোটেই উপকার হয়নি।
১৮৪৪ সালে ৬ বছর বয়সে মেদিনীপুরের একটি ইংরেজি হাইস্কুলে বঙ্কিমচন্দ্রকে ভর্তি করা হয়। বালক বঙ্কিমের মেধায় মুগ্ধ হয়ে ডাবল প্রমোশন দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক এফটিড। ছোট্টবেলা থেকেই খুব মেধামনন ছিলেন বঙ্কিম।
১৮৪৯ সালের ২৩ অক্টোবর বঙ্কিমচন্দ্র হুগলি কলেজের স্কুল বিভাগে ভর্তি হন। সাধারণ পারদর্শিতার জন্য বঙ্কিমচন্দ্রকে কলেজ থেকে পুরস্কৃত করা হয়।
১৮৫৪ সালে তিনি কলেজ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৫ সালের পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক ২০ টাকা হারে বৃত্তি পান।
১৮৫৬ সালের ১২ জুলাই বঙ্কিমচন্দ্র আইন পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৫৭ সালে আইন বিভাগ থেকে অ্যান্ট্রান্স পরীক্ষার প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৮ সালের ১১ ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্কিমচন্দ্রকে বিএ উপাধি প্রদান করা হয়। হুগলি কলেজে ভর্তির আগেই ১৮৪৯ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে মোহিনী দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পাত্রীর বয়স ছিল পাঁচ বছর। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় মোহিনী দেবী মারা যান। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম জীবনের সাহিত্য সাধনার অনুপ্রেরণাদাত্রী ছিলেন অকাল প্রয়াতা মোহিনী দেবী।
প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর আট মাস পর পিতা-মাতার আদেশে বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৬০ সালে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
১৮৫৮ সালের ৬ আগস্ট বঙ্কিমচন্দ্র যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৮৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত সর্বদা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ছাত্রাবস্থায়। ১৮৫৩ সালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকরপত্রিকায় কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। পারিতোষিক লাভ করেন ১০ টাকা। কবিতাটির নাম ছিল কামিনীর প্রতি উক্তিতার প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম পদ্যপ্রকাশিত হয় সংবাদ প্রভাকর১৮৫৩ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি। এছাড়া সংবাদ সাধুরঞ্জনসমাচার দর্পণপত্রিকায় ও তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়।
ঈশ্বর গুপ্তের উসাহে বঙ্কিমচন্দ্র সংবাদ প্রভাকরএ নিয়মিত পদ্য-গদ্য রচনা শুরু করেন। আইন কলেজে পড়ার সময় ১৮৫৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। ললিতাপুরাকালিক গল্প। তথা মানস।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রধান উপন্যাস লেখেন ইংরেজি ভাষায়, নাম জধলসড়যধহং রিভব। (১৮৬৪) ইন্ডিয়ান ফিল্ডপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে উপন্যাস লিখেন দূর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫), কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯), বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), ইন্দিরা (১৮৭৩), যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪), চন্দ্রশেখর (১৮৭৫), রজনী (১৮৭৭), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), রাজসিংহ (১৮৮২), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪), সীতারাম (১৮৮৭), প্রবন্ধগ্রন্থÑ লোক রহস্য (১৮৭৪), বিজ্ঞান রহস্য (১৮৭৫), কমলাকান্তের দফতর (১৮৭৫), বিবিধ সমালোচনা (১৮৭৬), রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী (১৮৭৭), প্রবন্ধ-পুস্তক (১৮৭৯)।
অন্যান্য রচনা হলÑ সহজ রচনা শিক্ষা, সহজ ইংরেজি শিক্ষা, এবং শ্রীমদ্ভাগবদগীতা (১৯০২)। ১৮৯৪ সালের প্রথমদিক থেকেই তার বহুমূত্র ব্যাধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল অপরাহেœ বঙ্কিমচন্দ্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

0 comments:

Post a Comment

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More