বাংলা সাহিত্যের অনেকগুলো শাখার সূচনা হয়েছে তার হাতে। অনেক ‘প্রথম’ এর জš§দাতা কবির বাহ্যিক অবয়বের আভিজাত্য যথাযথভাবে সঞ্চালিত হয়েছিল তার সৃষ্টিতে, লেখায়। লেখালেখিকে তিনি দেখতেন স্রোতহীন শান্ত নদী কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মধুসূদন দত্তের জš§। স্থানীয় পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে কলকাতার হিন্দু কলেজে প্রবেশ করেন ১৮৩৭ সালে। ১৮৪১ এই কলেজের সিনিয়র বিভাগে প্রবেশের পর পাশ্চাত্যের ভাব ও আদর্শের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ জšে§। একালে তার কবিত্ব শক্তিরও উšে§ষ ঘটে। তার অন্তরে হোমার, ভার্জিল, ওবিদ, টাসো ও মিল্টনের মতো মহাকবি হওয়ার বাসনা জাগে। বিলেতে গিয়ে ইংরেজিতে কাব্যচর্চা করলে এ আকাক্সক্ষা পূরণ হবে ভেবে সেখানে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হন। মূলত এ আশা থেকে ১৯৪৩ সালে স্বধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং নামের আগে ‘মাইকেল’ শব্দটি যুক্ত হয়। বাংলা ভাষার সেবায় আÍনিয়োগের আগে খেই হারিয়ে ফেলা কবির উলেখযোগ্য রচনা ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’। এ সময় তিনি ‘টিমোথি পেনপোয়েম’ ছদ্মনামে কাব্য লিখতেন। বাংলার অমৃত ভাণ্ডারের বিবিধ রতনের খোঁজে মনোনিবেশ করার পর নাটক, প্রহসন, কাব্য কিংবা মহাকাব্যÑ সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় অবাধ বিচরণ করেছেন। তার উলেখযোগ্য নাটকের মধ্যে শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী প্রভৃতি বাংলা নাট্যধারায় নতুন অধ্যায় যোগ করে। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনে ইংরেজ যুবা ও রক্ষণশীল হিন্দুদের অনাচারকে ব্যঙ্গ করতেও কার্পণ্য করেননি। মহাভারতের কাহিনীকে জীব্য করে ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য রচনার পর জš§ দেন ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যের। বাংলা পদ্যসাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের স ষ্টা ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে অবস্থানকালে ইতালিয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে ‘চতুর্দশপদী কবিতা’ (সনেট) রচনা করেন।
অমিত প্রতিভাধর এ কবির শেষ জীবন ছিল দুঃখ ও দুর্দশায় জর্জরিত। অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটে কেটেছে তার অন্তিম দিনগুলো। অবশেষে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতা জেনারেল হাসপাতালে তিনি পরলোক গমন করেন। বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার উদ্যোক্তা কবি বহুদেশ ঘুরে কপোতাক্ষের জলে মিটিয়েছেন øেহের তৃষ্ণা। মধুকবির ১৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আসুন সাম্যের দীক্ষা নিই তার কবিতা থেকেইÑ
‘ঊর্ধ্ব শির যদি তুমি কুল মান ধনে,
করিও না ঘৃণা তব নীচ শির জনে।’
0 comments:
Post a Comment