সোনিয়া গান্ধী এখন ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে




ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দু’দিনের সফরে রোববার ঢাকায় এসেছেন। একটি বিশেষ বিমানে রাত ৯টায় তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিমানবন্দরে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রাণ গোপাল দত্ত। সোনিয়া গান্ধীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতের আরবান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক মন্ত্রী কুমারী সেলজিও ঢাকায় এসেছেন।
ঢাকা সফরকালে সোনিয়া গান্ধী দু’দেশের সরকারি পর্যায়ের কোন এজেন্ডা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করবেন না। তিনি আসছেন অটিজম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে, তাই এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় বিরোধপূর্ণ ইস্যু বা মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরের কোন চুক্তি হতে পারে বা হওয়া উচিত সেসব নিয়ে কোন আলোচনায় যাবেন না তিনি। ভারতের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সেদেশের সরকারি কর্মকাণ্ডে কখনও হস্তক্ষেপ করেন না। দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে সরকারি কোন ব্যাপারে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন না। সরকারি কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তারের কোন চেষ্টা বা এ ধরনের কোন বিতর্কে জড়াতে চান না তিনি। এমনকি প্রচারবিমুখ সোনিয়া গান্ধী ভারতের গণমাধ্যমেও সেভাবে আসেন না। তাই সফরকালে হোটেল রূপসী বাংলায় আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। সফরকালে তিনি কোন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার বা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সফরকালে সোনিয়া গান্ধী আজ দুপুরে রূপসী বাংলা হোটেলে মাত্র ২৫ মিনিটের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাৎকালে দু’দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দুই নেত্রীর আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধানের ইস্যু উঠবে না। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরে কোন কোন চুক্তি হবে তা নিয়েও আলোচনা হবে না। প্রধানমন্ত্রীও এ ধরনের কোন কথা তুলবেন না বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কারণ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কোন বিষয়ে বা অভ্যন্তরীণ কোন বিষয় আলোচনায় এনে সোনিয়া গান্ধীকে বিব্রত করার পথে যাবে না বাংলাদেশ। তবে অটিজম বিষয়, পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং ভারতের কংগ্রেস ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। মনমোহনের ঢাকা সফরকালে দু’দেশের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তিগুলো নিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা না হলেও পরোক্ষভাবে বিষয়গুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন কূটনৈতিক মহল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলনে যোগ দিতে সোনিয়া গান্ধী ঢাকা এসেছেন। আজ রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত এই অটিজম সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সোনিয়া গান্ধী। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফরকালে কংগ্রেস সভানেত্রী ও ভারতের অটিজম অ্যাকশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সোনিয়া গান্ধী মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর (মরণোত্তর) পক্ষে স্বাধীনতার সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রপতি জিলুর রহমান আজ এই পদক ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দেবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি ও বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা, জীবিত সেক্টর কমান্ডাররা, বিদেশের কূটনীতিকরা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সফরকালে সোনিয়া গান্ধীর সফরসূচিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সোনিয়া গান্ধী আজ সকালে সাভার স্মৃতিসৌধে পূষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সাভার থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন তিনি। এরপর রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত অটিজম সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ২৫ মিনিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রূপসী বাংলা হোটেলে বৈঠক করবেন তিনি। এখানে মধ্যহ্নভোজ শেষে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ফিরবেন তিনি। সেখানে বিকাল পৌনে ৪টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সোনিয়া গান্ধী বিকাল ৫টার পরপরই বঙ্গভবনে যাবেন। বঙ্গভবনে বিকাল ৫টা থেকে রাষ্ট্রপতি জিলুর রহমানের সঙ্গে আধঘণ্টা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি বঙ্গভবনের দরবার হলে উপস্থিত হবেন। দরবার হলে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন সোনিয়া গান্ধী। রাষ্ট্রপতি জিলুর রহমান সোনিয়া গান্ধীর হাতে এই বিশেষ সম্মাননা তুলে দেবেন। সম্মাননা গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে রূপসী বাংলা হোটেলে নৈশভোজে যোগ দেবেন। এরপর রাত পৌনে ৯টায় বিশেষ বিমানে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সফরকালে সোনিয়া গান্ধীর নিরাপত্তার জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকা পৌঁছানোর পর থেকে ফিরে যাওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকছেন সোনিয়া গান্ধী। তার চলাচলের সময় নিরাপত্তা কর্মীদের গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়িকে ধারে-কাছেও ঘেঁষতে দেয়া হবে না। সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টিতে রাখবেন ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষীরা। এ সময় ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার মেশিনও সচল রাখা হবে। নিরাপত্তাবিষয়ক হাইটেক প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকায় চলছে বিশেষ অভিযান। এসব কাজে ২ হাজার নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোনিয়া গান্ধীর নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান করতে ভারতের স্পেশাল প্রটেকশন গ্র“পের (এসপিজি) প্রতিনিধি দল বুধবার ঢাকা পৌঁছেছে। তাদের ব্যবহারের জন্য দিলি থেকে বুলেটপ্র“ফ বিশেষ গাড়ি বিমানে করে আনা হয়েছে। সোনিয়া গান্ধীর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ থেকে বুলেটপ্র“ফ গাড়ি নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই গাড়িই সোনিয়া গান্ধী সফরকালে ব্যবহার করছেন। এছাড়া সোনিয়া গান্ধীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে এসএসএফ, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। সোনিয়া গান্ধী সাভার স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনকালে এবং ঢাকায় চলাচলের সময় নির্দিষ্ট রাস্তায় অন্য যানবাহন সাময়িক নিষিদ্ধ করা হবে।

0 comments:

Post a Comment

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More