অটিস্টিক শিশুদের পরিবারে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা হোসেন বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারদের মেনে নেয়া এবং তাদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারার বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করার এখনই সময়। দু’দিনব্যাপী অটিজম সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দু’দিনের এ সম্মেলনে দেশে এবং বিদেশে অটিস্টিক শিশুদের পরিবারের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের সম্মেলন এটিই প্রথম। সম্মেলনে প্রায় ৩৭০ জন দেশী ও বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তি যোগ দেন। ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পার্টির প্রধান সোনিয়া গান্ধী সোমবার হোটেল রূপসী বাংলায় দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
শিশুমনোবিজ্ঞানী সায়মা হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক চিকিৎসক মনোবিজ্ঞানীসহ সবাই এখন অটিজম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারছেন। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম নিয়ে গবেষণা ও তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলবে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।
রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে দেশী-বিদেশী আলোচকদের মুখে সমন্বিত পরিকল্পনা ও গবেষণালব্ধ তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে অটিজম সমস্যা সমাধানের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। বক্তাদের প্রায় প্রত্যেকে অটিজম শিশুদের অভিভাবকদের নেতৃত্বে রেখে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে উলেখ করেছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের সভাপতিত্বে রূপসী বাংলা হোটেলে দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ভারতের অলোকা গুহ, ইন্দোনেশিয়ার মিলি বুদ্ধিমান, মিয়ানমারের চওলিন, নেপালের সুনীতা মালেকার, শ্রীলংকার রামজানি গামানি, থাইল্যান্ডের পানপিমল উইপুলাকরন, সিয়ারোর কাজী মনিরুল ইসলাম ও ভুটানের ফিনটসো চোডেন।
স্বাস্থ্য সেক্টরের অপারেশন প্যানে (ওপি) ‘অটিজম’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর রূপসী বাংলায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলনের উদ্বোধনের পরদিন মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক ব্যাধি (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস) ওপিতে অটিজম বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ওপির আওতায় পৃথক বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সারাদেশে চিকিৎসক, নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, চাইল্ড সাইকোলজিস্টসহ অটিজম সংশিষ্ট সবাইকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। অটিজম শিশুর অভিভাবকদের জন্যও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করে অটিজম শিশু দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার পরামর্শসহ দূরশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়াও অটিজম সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. শিফায়েতউল্যা মঙ্গলবার বিকালে যুগান্তরকে বলেছেন, জাতীয়ভাবে অটিজম বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে এটিকে ওপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওপিতে যুক্ত হওয়ায় অটিজম শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা আগের তুলনায় বহুগুণ বাড়বে বলে সংশিষ্টরা মনে করছেন।
জানা গেছে, দেশে অটিজমসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের শনাক্তকরণের জন্য সরকারিভাবে ১০টি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র থাকলেও অটিজম শিশুদের চিকিৎসাসামগ্রী অত্যন্ত অপ্রতুল। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক নায়লা জামান খান যুগান্তরকে বলেন, অটিজম শিশুরা সামাজিকতা, যোগাযোগ ও আচরণগত বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত সমস্যায় ভোগে। তাদের শনাক্তকরণের জন্য ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ও বিশেষ ধরনের প্রযুক্তির সহায়তা এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। তিনি জানান, কিন্তু সেসব চিকিৎসা উপকরণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কানাডার হানেন সেন্টারের মোর দেন ওয়ার্ড নামে একটি সংস্থার তৈরি থ্রিপল পি, প্যাকসসহ আধুনিক প্রযুক্তির চিকিৎসা উপকরণগুলোর দাম ৫ থেকে ১০ হাজার ডলার। সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থায় এসব উপকরণ থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বাংলাদেশে অটিজম শিশুর সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে রাজধানীর মিরপুর ও মালিবাগে ১ হাজার শিশুর ওপর পরিচালিত এক জরিপে ৪ জন অটিজম শিশু পাওয়া যায়। এর আগে কিশোরগঞ্জে ৪ হাজার শিশুর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় কোন অটিজম শিশু পাওয়া যায়নি। সে হিসেবে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিজম শিশুর সংখ্যা বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়। উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারেই অটিজম শিশু পাওয়া যায়।

0 comments:

Post a Comment

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More