সংসদ রিপোর্ট
বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবী সংগঠনের আপত্তি উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান বিলোপের প্রস্তাব রেখে সংবিধান সংশোধনে পঞ্চদশ সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বিরোধী দলবিহীন সংসদে উত্থাপিত এই বিলটিতে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি [সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল, ২০১১] শনিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। বিলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অনধিক চার নির্বাচন কমিশনার নিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। সেই সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য করে আলাদা অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়-নির্দেশনার পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের আগেই উত্থাপিত হল আলোচিত এই বিলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে উত্থাপিত বিলের ২০ নম্বর প্রস্তাবে বলা আছে, ‘সংবিধানের ৫৮ক অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে।’ ২১ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়, “২ক পরিচ্ছেদÑ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হইবে।” বিলটি পাস হলে কবর রচিত হবে আগের মডেলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার। এর ফলে বিরোধী দল বা অন্যদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবিতে নয়, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে সংবিধানে ফের সংশোধনী এনে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য। সংবিধানে ফের সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা না হলে বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমার ক্ষেত্রে যে সুপারিশ করেছিল, উত্থাপন হওয়ার আগে মুদ্রিত বিলে সেক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ কমিটি এই সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ১২৩-এ সংশোধনী এনে সুপারিশ করে বলেছিল, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ তবে মুদ্রিত বিলে ছিল ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৪৮ পৃষ্ঠার এই বিলের ৩ নম্বর প্রস্তাবে রয়েছেÑ প্রথম অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বিল উত্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন। তবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন। গণভোট দাবি করে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন নিয়ে জাতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে। এটা ঠিক নয়। মোহাম্মদ ফজলুল আজিম আরও বলেন, বিলটি এখনই উত্থাপিত হলে আলাপ-আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। বিলটি পাস হলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগে সরকার ও বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিলটি সংসদে উত্থাপন করা যেতে পারে। মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে দু’দফায় ওয়াকআউট করেন।
পরে বিলটি উত্থাপনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তার বক্তব্য তথ্যভিত্তিক ও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ আদালতের দেয়া রায়ের আগে সংসদে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিটি ২৭টি বৈঠক করেছে। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাবেক প্রধান বিচারপতি, সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত থাকা আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী ও সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। সংসদে উত্থাপিত ওই সুপারিশের আলোকে তৈরি করা এই বিল মন্ত্রিসভায়ও অনুমোদন হয়েছে। ফলে এই বিলটি নিয়ে আর নতুন করে যাচাই-বাছাই বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু নেই। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, এটা সংবিধানের মূলমন্ত্র গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানে উলেখ রয়েছে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ পরিচালনা করবে। যে কারণে আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। তাই এই ব্যবস্থা রাখার সুযোগ নেই।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, সংবিধানের কোন ক্ষমতাবলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা মার্শাল ল’ জারি করেছে? কোন ক্ষমতাবলে সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে? তিনি জিয়াউর রহমানের নাম উলেখ করে বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনার মহানায়ক জিয়াউর রহমান স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন এবং সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান সংশোধন করলেন। ’৭৯ সালে ক্যান্টনমেন্টে সৃষ্ট দল বিএনপি ক্ষমতায় এসে সামরিক শাসনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করেছিল, সেই পঞ্চম সংশোধনীকে আইনে রূপ দেয়। তিনি বলেন, সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানাবলীর মধ্যে সামরিক আইন বলে যেসব সংবিধান সংশোধনী বিষয়গুলো ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর ফলে তা বাতিল করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, কোন একক ব্যক্তি ফরমান দিয়ে সংবিধান সংশোধন করতে পারেন না। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা একমাত্র জাতীয় সংসদের। তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন।
উত্থাপনের পর স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন পেশের জন্য বিলটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান। বিসমিলাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম বহাল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ রেখেই বিলটি উত্থাপিত হয়। তবে এই তিন বিষয়ে সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির দুই সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু আপত্তি দিলেও (নোট অব ডিসেন্ট) বিলে তা উলেখ করা হয়নি।
উত্থাপিত বিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) ও ৫৮(ঙ) বিলুপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব পাস হলে বিলুপ্তি ঘটবে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার। এর আগে ৮ জুন সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ও সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৫১টি প্রস্তাবসহ সংবিধান সংশোধনের এই রিপোর্টটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য রিপোর্টটি ওইদিনই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। এর ১২ দিনের মাথায় ২০ জুন আইন মন্ত্রণালয় প্রণীত সংবিধান সংশোধন বিলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। চার দিন পরই শনিবার বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে : বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানের বিভিন্ন বিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা কর্তৃক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১-এর বিলে কতিপয় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মূলত ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য, জনগণের মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাব রয়েছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার লক্ষ্যে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণ এবং এ অপব্যবহারক্রমে দেশে আইনের শাসন ও জনগণের অধিকার পরাহত করার প্রচেষ্টা বন্ধের লক্ষ্যে এ ধরনের পদক্ষেপকে অপরাধগণ্যে এর সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যক্তি, উস্কানিদাতা ও সহযোগীদের শাস্তি প্রদানের বিধান বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনে জনগণের রায় প্রতিফলিত হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত বিবেচ্য বিলটি আইনে পরিণত হলে উপরে বর্ণিত উদ্দেশ্যগুলোর সফল বাস্তবায়ন, জনগণের রাজনৈতিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। ফলশ্র“তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে বলে আশা করা যায়। সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। এখানে শুধু অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতাগ্রহণকারীদের শাস্তি প্রদান ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাবের কথা উলেখ করে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের এই বিলটি আইনে পরিণত হলে তা জনগণের রাজনৈতিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
বিলে যা বলা হয়েছে : উত্থাপিত বিলে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে ১৫০(২) অনুচ্ছেদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিলে লেখা আছেÑ ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা।’ ঘোষণাটি হলÑ ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’ একই সঙ্গে বিলে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ এবং সপ্তম তফসিলে ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
উত্থাপিত বিলটিতে সংবিধানের প্রারম্ভে, প্রস্তাবনার ওপরে ‘বিসমিলাহির রহমানির রহিম’ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানে আগে এর বাংলা অনুবাদ ছিলÑ ‘দয়াময়, পরম দয়ালু আলাহের নামে।’ তবে বিশেষ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিলে এই অনুবাদের সঙ্গে অবলিক (/) যুক্ত করে ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’ কথাটিও যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
অনুচ্ছেদ ২(ক)তে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে বিলে। বলা হয়েছেÑ ‘তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ এছাড়া ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিধান বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বিলে। বিলে অনুচ্ছেদ ৪-এর শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘জাতির পিতা’। এখানে প্রস্তাব রেখে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’
ভবিষ্যতে কেউ ক্ষমতায় এসে যেন এই অনুচ্ছেদে সংশোধন-পরিবর্তন না আনতে পারে সেজন্য অনুচ্ছেদ ৭(ক)-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ৭(খ) যোগ করার প্রস্তাব দিয়ে বিলে বলা হয়েছেÑ “এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথমভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।”
উত্থাপিত বিলে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলে ১২২ নম্বর অনুচ্ছেদেও বড় ধরনের পরিবর্তেনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা সংক্রান্ত ১২২ অনুচ্ছেদের দফা-২ এর উপদফা (গ) ও (ঘ)-এর পরিবর্তে উপ-দফা (গ) (ঘ) ও (ঙ) প্রতিস্থাপনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দোষী না হইয়া থাকেন।’ অর্থাৎ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে কেউ দোষী হলে তিনি ভোটার হওয়ার অযোগ্য হবেন। এর ফলে ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের মধ্যে যারা বিশেষ ট্রাইবুনালে দোষী হবেন তাদের ভোটাধিকার থাকবে না। এতে তারা আগামীতে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না।
উত্থাপিত বিলে অনুচ্ছেদ ৬৫-এ সংশোধনী এনে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬৫ অনুচ্ছেদে নতুন করে ৩(ক) দফা সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে বিলে বলা হয়, ‘৩(ক) সংবিধান (পঞ্চদশ) আইন, ২০১১ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদে এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত তিনশত সদস্য এবং (৩) দফায় বর্ণিত পঞ্চাশ মহিলা সদস্য লইয়া সংসদ গঠিত হইবে।’ বিলটি পাস হলে চলতি সংসদেই নারী আসন পাঁচটি বৃদ্ধি পাবে।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারক ও বিচারকের মতো অপসারণযোগ্য পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতি সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ ৯৬-এ সামান্য সংশোধনী এনে বিলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখার প্রস্তাব রেখে বলা হয়Ñ ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে।’ কাউন্সিলের তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রপতি সংশিষ্ট বিচারককে অপসারণ করতে পারবেন।
বিলে ’৭২-এর মূল সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের চার মূলনীতিÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন অনুচ্ছেদ ৬(২) প্রতিস্থাপনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’
অনুচ্ছেদ ১৮-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বিলটিতে। নতুন অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) সংযোজন করে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের প্রস্তাবও করা হয়। বিলে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হইবে।’
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯-এ সংশোধনীর প্রস্তাব এনে বিলে বলা হয়েছে, ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’
১০ নম্বর অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে বিলে প্রস্তাবে বলা হয়, ‘মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’
অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃংখলা সম্পর্কিত ১১৬ অনুচ্ছেদে সংশোধনীর প্রস্তাব এনে বিলে বলা হয়েছে, ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্ব পালনেরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃংখলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিমকোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’
মৌলিক বিধান সংশোধন অযোগ্য : সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধনের অযোগ্য উলেখ করে বিলে বলা হয়, “এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথমভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।”
উলেখযোগ্য কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব : ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রাখা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শনেরও সুপারিশ রয়েছে বিলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এর মেয়াদকাল, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা সংশিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো বিলুপ্তির সুপারিশও প্রস্তাবিত আইনে রয়েছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছদ সংশোধনের প্রস্তাব রেখে বিলে বলা হয়, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবেÑ ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে’ প্রতিস্থাপিত হবে। বিলে বলা হয়েছে, সংবিধানের প্রস্তাবনার ওপর বিসমিলাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আলাহের নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে সন্নিবেশিত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ জন্য সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে নতুন একটি দফা সংযোজনের সুপারিশ রয়েছে। দফাটি হলোÑ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সব সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোতে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে। অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে অপরাধ বিবেচনায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহ্নিত করে বিলে বলা হয়েছে, অপরাধে দোষী ব্যক্তি সংসদের আইন দ্বারা অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আদিবাসী ও নারী প্রসঙ্গ : আদিবাসী সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ নামে ২৩ (ক) নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হবে। সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বিভিন্ন উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া সংসদে নারী আসন আরও পাঁচটি বৃদ্ধি ও নির্বাচন কমিশনে সদস্য সংখ্যা পাঁচ করার সুপারিশ রয়েছে বিলে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণা : ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ওই [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান] ভাষণ এবং এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী কার্যক্রম নেয়ার নির্দেশনা তথা ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর দেয়া টেলিগ্রাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে বিলে সুপারিশ রয়েছে। মুজিবনগর সরকারের ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও বিলে রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের প্রস্তাব : বিলের ২০ ও ২১ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়, সংবিধানের ৫৮ ক অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে। সংবিধানের ২ক পরিচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপ- সংবিধানের ২ক পরিচ্ছেদ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হইবে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদ সংক্রান্ত ১৫২ অনুচ্ছেদ সংশোধন ও ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী সংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে বিলে।
যত সংশোধনী প্রস্তাব : সংবিধানের প্রারম্ভ, প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ২ক, অনুচ্ছেদ ৪, অনুচ্ছেদ ৪ক, অনুচ্ছেদ ৬, নতুন অনুচ্ছেদ ৭ক, নতুন অনুচ্ছেদ ৭খ, অনুচ্ছেদ ৮, অনুচ্ছেদ ৯, অনুচ্ছেদ ১০, অনুচ্ছেদ ১২, নতুন অনুচ্ছেদ ১৮ক, অনুচ্ছেদ ১৯, নতুন অনুচ্ছেদ ২৩ক, অনুচ্ছেদ ২৫, অনুচ্ছেদ ৩৮, অনুচ্ছেদ ৪২, অনুচ্ছেদ ৪৪, অনুচ্ছেদ ৪৭, অনুচ্ছেদ ৫৮ক, ২ক পরিচ্ছেদ অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৯ঙ, অনুচ্ছেদ ৬১, অনুচ্ছেদ ৬৫ অনুচ্ছেদ ৬৬, অনুচ্ছেদ ৭০, অনুচ্ছেদ ৮০, অনুচ্ছেদ ৮২, অনুচ্ছেদ ৯৩, অনুচ্ছেদ ৯৫, অনুচ্ছেদ ৯৬, অনুচ্ছেদ ৯৮, অনুচ্ছেদ ৯৯, অনুচ্ছেদ ১০০, অনুচ্ছেদ ১০১ ও ১০২, অনুচ্ছেদ ১০৩, অনুচ্ছেদ ১০৭, অনুচ্ছেদ ১১৬, অনুচ্ছেদ ১১৮, অনুচ্ছেদ ১২২, অনুচ্ছেদ ১২৩, অনুচ্ছেদ ১৪১ ক, অনুচ্ছেদ ১৪২, অনুচ্ছেদ ১৪৫ক, অনুচ্ছেদ ১৪৭, অনুচ্ছেদ ১৫০ অনুচ্ছেদ ১৫২, প্রথম তফসিল, তৃতীয় তফসিল, চতুর্থ তফসিল, পঞ্চম তফসিল, ষষ্ঠ তফসিল ও সপ্তম তফসিলÑ সংবিধানের এসব বিষয়ে সংশোধন, সংযোজন, প্রতিস্থাপন, বিলুপ্ত ও নতুন অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব রয়েছে।
যেভাবে বিলটি সংসদে : গত বছরের ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার প্রস্তাবে সংবিধান সংশোধনে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৬৬ বিধি অনুযায়ী ১৫ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র করা হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। অন্য সদস্যরা হলেনÑ আমির হোসেন আমু, মোঃ আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট মোঃ রহমত আলী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, রাশেদ খান মেনন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, হাসানুল হক ইনু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ড. হাছান মাহমুদ ও ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। এ পর্যন্ত ওই কমিটি ২৭টি বৈঠক করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এর আগে পাঁচজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, মূল সংবিধানের সঙ্গে সংশিষ্ট গণপরিষদ সদস্যসহ দেশের ১৮ জন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ২৬ জন বুদ্ধিজীবী, ২৬টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নেতৃবৃন্দের মতামত নেয় কমিটি। এছাড়া সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করে তারা। বিশেষ কমিটিতে যোগ দিয়ে মতামত দেয়ার জন্য বার বার বলা হলেও প্রধান বিরোধী দল এতে সাড়া দেয়নি।
0 comments:
Post a Comment