পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম সভ্যতা রয়েছে। এর মধ্যে ওলমেক সভ্যতা মায়ান সভ্যতার মতোই পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার একটি। ওলমেকরাই প্রথম প্রাচীন মেক্সিকোয় ধর্ম, পঞ্জিকা, লেখনী, গণিতশাস্ত্রে ও কম্পাসের সূত্রপাত করেছিল। ওলমেকরা প্রাচীন মেক্সিকোর অধিবাসী ছিল। ‘ওলমেক’ শব্দটি এসেছে অ্যাজটেক সভ্যতার ‘নাহুতল’ ভাষা থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ‘রাবার পিপল’। পনেরো-ষোল শতকে উপসাগরীয় এলাকায় বসবাসকারীদের এই নামে ডাকা হতো। ওলমেকদের আদিনিবাস ধরা হয় আফ্রিকাকে। সেখান থেকে বহুদূরের পথ পেরিয়ে ওলমেকরা এসেছিল আমেরিকায়। অনেকেই ওলমেকদের ‘নওবান’ বলে থাকেন। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এটি ছিল প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মেসো-আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। মেসো-আমেরিকা অর্থ মধ্য আমেরিকা। আর ওলমেকরাই মেসো-আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা। ওলমেক সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মেক্সিকোর ইউকান উপদ্বীপ। ওলমেকরা মেক্সিকো উপসাগরের উপকূলে টুক্সটিল পাহাড়ের পাদদেশের জলাভূমিময় জঙ্গলে ও জঙ্গলের পাশের গ্রামে বাস করত। বর্তমান মেক্সিকোর ভেরাকুজ ও তাবাসকো প্রদেশেই প্রথম নগর ও গ্রাম গড়ে তুলেছিল ওলমেকরা। ধারণা করা হয় এরা পিরামিড বানাতে জানত। মেসো-আমেরিকায় প্রথম স্থাপত্য নির্মাণে ও ভাস্কর্য গড়তে ওলমেকরা পাথর ব্যবহার করে। এ জন্য তারা দূরবর্তী পাহাড় থেকে পাথর টেনে আনত। তৈরি করত ৮-৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পুরুষের মুখ। এগুলো এখনও মেক্সিকোর ভিলাহেরমোসা নগরে দেখা যায়। ১৮৬২ সালের দিকে মেক্সিকোর অরণ্যঘেরা জলাভূমিতে চাষের জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। হঠাৎ করেই মাটির নিচে পুঁতে রাখা একটি লোহার কেটলি বেরিয়ে এল। যাতে পাথরের একটি ভাস্কর্যের ভাঙা মাথার সন্ধান মিলল। প্রতœতাত্ত্বিকরা ভাঙা মাথাটি নিয়ে গবেষণা করে বের করলেন এটি ওলমেক সভ্যতার নিদর্শন। ১৯৪২ সালে মেক্সিকোতে এক আন্তর্জাতিক প্রতœতাত্ত্বিক সম্মেলনে অজস্র নমুনা ও প্রমাণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ওলমেক সভ্যতার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সবাইকে নিশ্চিত করা হয়।
0 comments:
Post a Comment