
গত বছর মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত বিয়ে ছিল ফারুকী-তিশার। ঘটা করে করা বিয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি হবে ১৬ জুলাই। একটা বছর কেমন কেটেছে এ দম্পতির? কেমন চলছে তাদের সংসার? ফারুকী-তিশার বাসায় জমজমাট আড্ডায় কথা হয়। বাসায় খানিকটা সময় অপেক্ষার পরই চিরচেনা হাসিমুখে হাজির হলেন তিশা। মুচকি হেসে তিশার বুদ্ধিদীপ্ত জবাব, ‘আর বইলেন না ভাই। কালকে লেট নাইট আউটডোর শুটিং ছিল। গরমে জান পুরাই শ্যাষ। আপনার ভাইও তো ব্যস্ত তার ছবিটার প্রিপ্রোডাকশনের কাজ নিয়ে। তিশার পেছন থেকে ফারুকীর আগমন, কি খবর ভাই? পরনে বেগুনি রঙয়ের ফুল¯িভ শার্টের সঙ্গে মানানসই নীল রঙ্গা জিন্সের প্যান্ট। তিশার পরনের লাল-কালো থ্রিপিসের সঙ্গে মুস্তফা সরোয়ার ফারুকীর পোশাক মানাচ্ছিল বেশ। পেছন ফিরে দেখা টিভিতে কোকাকোলার বিজ্ঞাপন দেখে প্রথম তিশাকে ফারুকীর ভালো লাগে। তারপর ফারুকী পরিচালিত ‘পারাপার’ টেলিফিল্মে কাজ করতে গিয়ে চেনাজানা শুরু দুজনার। ‘সিক্সটি নাইন’ নাটক করতে গিয়ে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পায় বিয়েতে। গত বছরের ১৬ জুলাই ফারুকী ও তিশা ঘটা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বিয়ের পরের অধ্যায় বিয়ের পর ব্যক্তিজীবনে বিশেষ কোন পরিবর্তন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিশা প্রথমেই প্রশ্নের তীরটা ঘুরিয়ে দেন ফারুকীর দিকে। ফারুকীর চটজলদি উত্তর, বেশ ভালোই তো। অনুমতি পেলে আবারও বিয়ে করতে আপত্তি নেই।’ উত্তরটা শুনে তিশা কিছুটা ভ্রƒ কুঁচকালে সপ্রতিভভাবে ফারুকী ইতি টানলেন, তোমাকে অবশ্যই’। সঙ্গে সঙ্গে ফারুকী খানিকটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, আসলে বিয়ের পর খুব একটা পরিবর্তনই হয়নি। এখনও মনে হয় আমরা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড হিসেবেই রয়ে গেছি। খালি রাতটুকু একসঙ্গে কাটানো হয়, এই যা। মাঝপথে স্বামীর কণ্ঠরোধ করে তিশা হাল ধরলেন, ‘আমিও আসলে আগে ভাবিনি বিয়ের পর নতুন সংসারের দায়িত্ব নিয়ে জীবনটাকে এত সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারব। প্রতিশ্র“তি পূরণ বিয়ের আগে প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে প্রতিশ্র“তির ফুলঝুড়ি ফোটানোর প্রবণতা চিরন্তন। যার কতটুকু বাস্তবতার মুখ দেখে তা সত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ। এদিক থেকে ফারুকী-তিশার ভাবনাটা একেবারেই ভিন্ন। এমন প্রশ্নের জবাবে দুজনেরই উত্তর, ‘আমাদের তো কোনও প্রতিশ্র“তিই ছিল না।’ ফারুকী অবশ্য সঙ্গে যোগ করলেন, ‘মানুষ প্রতিশ্র“তি করেই বোধহয় প্রতিশ্র“তি ভঙ্গের জন্য। তাই এসবে আমি বিশ্বাসী নই। আমার একটাই কথা, নিজে ভালো থাক। অন্যকে ভালো থাকতে দাও।’ মুখ ফুটে কিছু না বললেও মাথা নাড়িয়ে ফারুকীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেন তিশাও। সংসার ধর্ম বড় ধর্ম সবাই বলে সংসার ধর্ম বড় ধর্ম। সত্যিটা কি? এ প্রসঙ্গে ফারুকীর উত্তর, ‘আসলে কোন জিনিসকে যদি বোঝা হিসেবে মনে করেন তাহলেই বিপদ। আমার পরিবার আমার কাছে একটা পালকের মতো। এর ভার আমার কাছে দায় না, বরং বেশ উপভোগই করি। যদিও আমি বরাবরই একটু দায়িত্ব এড়িয়ে চলা টাইপের মানুষ। ছেলেবেলা ছিলাম বাবার হোটেলে, এখন এসে উঠেছি বৌয়ের হোটেলে। হোটেল সার্ভিসের অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি।‘ বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলেন দুজন। একই সুরে তিশার জবাব, ‘আমার সংসার আমার সন্তানের মতো। এর কোন কাজই আমার কাছে অতিরিক্ত কিছু মনে হয় না। বরং নিজের ও শ্বশুরবাড়ির মানুষদের খোঁজখবর কিংবা সেবাযতœ করতে বেশ ভালোই লাগে। নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নিজের কাছে। সাংসারিক খুনসুটি ছেলেরা বরাবরই অগোছাল থাকবে, মেয়েরা ঘরের সব কাজ সময়মতো গুছিয়ে করবে এটাই বোধহয় চিরায়ত নিয়ম। এর ব্যত্যয় যদি ঘটে তাহলে কেমন খুনসুটি হয় নিজেদের মাঝে? উত্তরে তিশা বেশ গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘এটা আসলে আমার খুব সৌভাগ্যই বলতে হবে, নিজের কাজকর্ম আর জিনিসপত্র গুছিয়ে করার কিংবা রাখার একটা বিশেষ গুণ আমি আমার বাবার মাঝে দেখেছি। সেই একই গুণ দেখি ওর মাঝেও। খুব যে আহামরি পরিপাটি তা বলব না। কিন্তু সংসারের কাজে আমার প্রতি ফারুকী যথেষ্ট সাপোর্টিভ।’ তিশাকে থামার অবকাশ না দিয়ে টিপ্পনি কেটে ফারুকীর উত্তর, ‘ঘটনা বরং উল্টো। ঘরে জুতো নিয়ে ঢুকে পরা, কিংবা ওয়াশরুমের লাইট জ্বালিয়ে বিদ্যুতের অপচয়ের বদঅভ্যাসগুলো ওর মাঝেই দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে আমিই ওকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করি।’ বলে বেশ একটা বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল ফারুকীর চোখেমুখে। মান-অভিমান কিংবা ঝগড়াঝাটি আচারে ঝাল না থাকলে যেমন স্বাদ পানশে হয়ে যায়, সংসারজীবনে কিছু মান-অভিমান কিংবা ঝগড়াঝাটি না থাকাটাও তেমনি। এনিয়ে ফারুকী বললেন, ‘আমাদের মাঝে এ জিনিসটা খুব একটা না হলেও চেষ্ট করি সপ্তাহে অন্তত কিছু একটা ইস্যু নিয়ে সামান্য ঝগড়া করার। নাহলে তো মজাই থাকে না, কি বলেন?’ তিশাও সুর মেলালেন একই ভঙ্গিতে, ‘একটা খুশি কি জানেন, ভুলটা যারই হোক, ‘স্যরিটা’ ওই আমাকে বলবে, আমিও সেটাই এক্সেপ্ট করি। আর ওর স্যরির ভাষাটাও অন্যরকম। মুখ ফুটে তো আর বলে না। পাশে পাশে ঘুরঘুর করে, আমার প্রতি ওর কেয়ারটাও তখন বেড়ে যায় খুব বলেই মিষ্টি করে হাসলেন তিশা। ‘কখনও কিছু নিয়ে মতবিরোধ হলে আমরা দুজনই খুব লজিক্যালি বিষয়গুলোকে নিয়ে আলোচনা করি। এই যেমন আমার ‘টেলিভিশন’ ছবিতে ওকে অভিনয়ের কথা বলছি। ওর এক কথা, না। আমার কথা হল, আমার স্ত্রী হওয়াটা ওর কোন বিশেষ যোগ্যতা যেমন নয়, তেমনি কোন অযোগ্যতাও হতে পারে না। কিন্তু সবদিক বিচার করে আমি কাহিনীর প্রয়োজনে ওর সমসাময়িক আর কাউকেই পাচ্ছি না। এনিয়েই আমাদের ছোটখাটো একটা ঝগড়া চলছে গত বেশকিছু দিন ধরে। যোগ করলেন ফারুকী। নতুন অতিথির অপেক্ষায় বিয়ে করলেন এক বছর হতে চললো। ভবিষ্যৎ প্রজš§ নিয়ে কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিশা বললেন, এখনও কোন পরিকল্পনা নেই। তবে এটাও ঠিক সিদ্ধান্তটা অনেকাংশেই নির্ভর করছে ওর ওপর। ফারুকীর বুদ্ধিদীপ্ত জবাব, ‘অতিথি আসতে তো কোনও বাধা নেই। যেকোনও সময়ই তাকে স্বাগতম জানানো যেতে পারে।’ তিশা কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘প্রেমজীবনে আমি ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় ইয়ার্কি করে বলতাম, আমাদের সন্তান ছেলে হলে নাম রাখব পাপ্পু, আর মেয়ে হলে পিংকী।
যদিও ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ছবিতে মোশাররফ করিমের মুখে এই কথাটিকে ব্যবহার করে ফারুকী ইয়ার্কিটাকে আরবাস্তবে রূপ দেয়ার সুযোগ রাখেনি। কথায় কথায় সময় কেটে গেছে অনেকটা। যাবার আগে বিয়ের বর্ষপূরণের দিনটা কিভাবে কাটাতে চাইছেন, এমন প্রশ্ন করলে ফারুকী-তিশা দুজনের সমস্বরে জবাব, ‘কাজ করে, আমরা বছরের ৩৬৫ দিনই এত্তো মজা করে কাটাই যে একটা দিনের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করে কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। বড়জোড় পুরো পরিবারের সবাই মিলে একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার হতে পারে।’ বিদায়ের ঘণ্টা পুরোপুরি বেজে ওঠার আগেই জানতে চাইলাম দুজনের ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে। ফারুকী তার সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি দর্শককে কাছে টানার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়টিকে মাথায় রেখে কাজ করার কথা বললেন। তবে তার জন্য খুব বেশি সময় নয়, মোটামুটি পঞ্চাশ বছর বাঁচতে পারলেই তার লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন দেখেন ফারুকী। অন্যদিকে লেখালেখির হাতটা বেশ ভালো থাকলেও ওপথটা খুব একটা মাড়াতে আগ্রহী নন তিশা। অভিনয়কেই লক্ষ্য করে তার ভবিষ্যৎ। তবে সুযোগ পেলে পর্দার অন্তরালে থেকে পরিচালনার স্বাদটুকুও নেয়ার বড্ড ইচ্ছে তার। আর শতবর্ষী হয়ে অন্যের ঘাড়ে বোঝা হওয়ার চেয়ে যতটুকু জীবন সক্ষম হয়ে থাকা যায়, ততদিন নিজের স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে চান তিনিও।






0 comments:
Post a Comment